top of page

সুষুপ্তি যোগ (মহা-শবাসন)

  • Writer: মহর্ষি মহামানস
    মহর্ষি মহামানস
  • Jul 8, 2019
  • 4 min read


ree

সুষুপ্তি যোগ (মহা-শবাসন) 

মহা-শবাসন : তদবিষয়ক আলোচনা ও নির্দেশ


সুপরিকল্পিত ভাবে আত্মবিকাশের জন্য যোগাভ্যাস করা প্রয়ােজন। 'যােগ' অর্থে মিলন। দেহের সাথে মনের, বহির্মনের সাথে অন্তর্মনের, বহির্জগতের সাথে অন্তর্জগতের মিলন, মহাপ্রাণের সাথে ক্ষুদ্র প্রাণের মিলন। এই যোগপ্রক্রিয়া ভালভাবে আয়ত্ত করতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতাও থাকা আবশ্যক। থাকতে হবে আকঙ্খা- প্রত্যাশা, প্রত্যয়, একাগ্রতা, সংবেদনশীলতা বা অনুভূতিপ্রবণতা, আর চাই শিথিল হওয়ার সক্ষমতা বা 'রিল্যাক্সিবিলিটি'। যথেষ্ট শিথিল হতে না পারলে, যোগে বিশেষ উন্নতি সম্ভব নয়। তাই, ‘আত্মবিকাশযোগ’ ও ‘মহামানস যোগ' শিক্ষার প্রথম পাঠই হলো— সুষুপ্তি-যোগ বা মহা-শবাসন। 

যোগাসন অভ্যাসের সময় তোমরা অনেকেই শবাসন অভ্যাস করেছ। 'শব' অর্থাৎ মৃতের ন্যায় আসনই হলো— শবাসন। কিন্তু হাত-পা ছড়িয়ে, চিৎ হয়ে শুলেই যথেষ্ট শিথিলতা আসেনা। দেহ-মনের পুরোপুরি শিথিলতা আনতে সুপরিকল্পিত পথে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এগোতে হয়। যোগনিদ্রার গভীরে ডুবে যেতে হলে, যোগনিদ্রার বিস্ময়কর ফল লাভ করতে চাইলে, শৈথিল্য লাভ করতে শিক্ষতে হবে প্রথমেই। আসলে, সুষুপ্তি-যোগ বা মহা-শবাসন বা গভীর ‘রিল্যাক্সেশন'-এর পরবর্তী গভীর স্তরই হলো— যোগনিদ্রা। আবার যোগনিদ্রা থেকে আরও অনেক গভীরে পৌঁছালে ভাব-সমাধি স্তর। একই পথ, শুধু গভীরতার পার্থক্য। সমাধিলাভ সবার পক্ষে সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা (শরীর-মন-ইন্দ্রিয়ের সামর্থ) সবার থাকেনা। তীব্র আকাঙ্খা, শ্রদ্ধা-ভক্তি-বিশ্বাস, আস্থা, প্রত্যয়, একাগ্রতা, অনুভূতিপ্রবণতা বা সংবেদনশীলতা ও শিথিল হওয়ার যোগ্যতা -এগুলি অত্যন্ত অধিক মাত্রায় থাকলে, তবেই ভাবাবিষ্ট হয়ে সমাধিস্তরে পৌঁছানো সম্ভব। তবে, সুষুপ্তি-যোগ বা মহাশবাসন -এর জন্য যে যোগ্যতার প্রয়োজন, তা' অনেক মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। প্রয়োজন শুধু উপযুক্ত গুরু বা পথপ্রদর্শক, -যে যোগনিদ্রায় সক্ষম করে তুলতে সাহায্য করবে।  

কারো কারো মধ্যে সমাধি সম্পর্কে বিশেষ কৌতুহল কাজ করে, কিন্তু, সমাধি স্তরে পৌছে সবার পক্ষেই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা। নেই। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই সেখানে আছে শুধু নিঃসীম অন্ধকার অথবা অগাধ শূন্যতা পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থা। এ সম্পর্কে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে 'যোগনিদ্রা' ও 'মহা-আত্মবিকাশ-যোগের' দ্বিতীয় ভাগে এবং 'মহামানস যোগ’ অধ্যায়ে।   

এখন বলি। কিভাবে এই সুষুপ্তি-যোগ বা মহাশবাসন-এর অডিও সিডি-র মাধ্যমে মহাশবাসন অভ্যাস করবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, যেখানে কোনো বিরক্তিকর ও উত্তেজনাকর শব্দ নেই, কোনো অবাঞ্ছিত বা কোনোরূপ বিঘ্নকারী কেউ বা কিছু থাকবে না, এমনই নির্মল নিরালা- নিরাপদ পরিবেশ মহাশবাসন অভ্যাসের পক্ষে উপযুক্ত স্থান। নিজের শোবার ঘরেও অভ্যাস করতে পারাযাবে। দরজা-জানালা বন্ধ করে, এমন ব্যবস্থা করবে-- যাতে কেউ তোমার বিশ্রামে ব্যাঘাত না ঘটায়। ঘরের পরিবেশ আরও উপযোগী করে তুলতে, মৃদু নীল আলাে এবং প্রশান্তিকর হালকা সুগন্ধময় ধূপের ব্যবহার করতে পারাে। চন্দন ধূপবাতি হলেই ভালো হয়।   

হালকা ও ঢিলাঢালা পোষাক পরে আরামদায়ক বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ো। হাত দুটি সরলভাবে দেহের দু-পাশে শিথিল করে রেখে দাও। হাতের তালু উপর দিকে অর্থাৎ চিৎ করে রাখলে ভলো হয়। তার আগেই সিডি বা ডিভিডি প্লেয়ারে মহাশবাসনের সিডি-টিকে সেট করে, শ্রুতি-সুখকর করতে, ভল্যুম এডজাস্ট করে, এমন ভাবে প্রস্তুত রাখবে- যেন, শুয়ে শুয়েই হাত বাড়িয়ে ‘সুইচ অন-অফ’ করা যায়। এবার প্লেয়ার চালু করে-- আবার পূর্বের অবস্থায় হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নাও। মন দিয়ে সিডি প্লেয়ারের কথাগুলি শুনতে থাকো এবং ক্রমশঃ হাত-পা সহ সমস্ত শরীরকে শিথিল করে দাও, এলিয়ে দাও মিশিয়ে দাও বিছানার সাথে।   

মহাশবাসন অভ্যাস করতে করতে ক্রমশঃ বোধ হবে--- যেন, শরীর নেই-- মন নেই, জগৎ সংসার কিছুই নেই, আছে শুধুমাত্র একটি চেতন সত্তা। --খুব আরামদায়ক বিশ্রামের মধ্যে ডুবে যাচ্ছো তুমি, তলিয়ে যাচ্ছো গভীর অন্ধকারের মধ্যে।

*শিথিল হওয়া বা শৈথিল্য লাভ হলো- বিষয়মুক্ত হওয়ার এক অতি সহজ উপায়। শিথিল হওয়ার মধ্য দিয়ে বিষয়মুক্ত হয়ে, অতি সহজেই ‘ট্রান্স'-এর মধ্যে ডুবে গিয়ে আকাঙ্খিত বিষয়ের সাথে যোগ ঘটানোই সুষুপ্তি-যোগ ও যোগনিদ্রার উদ্দেশ্য।

কিছুদিন অভ্যাস করলেই তুমি তোমার শরীর ও মনের এক শুভ পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবে। আস্তে আস্তে অনুভব করতে পারবে, তোমার মানসিক উন্নতি ও শারীরিক সুস্থতা। প্রথমদিকে প্রতিদিন একবার করে অভ্যাস করবে। পরে দু-একদিন অন্তর দুপুরে বা রাতে তোমার সুবিধামতো যে কোনো সময় অভ্যাস করবে। বিশ্রামের সময়ই হলো উপযুক্ত সময়। যখন কোনোরূপ বহির্মূখীনতা থাকবে না, থাকবে না খিদে-তৃষ্ণা বা কোনো কাজের তাড়া। ২৫-৩০ দিন বা তারও বেশী দিন অভ্যাসের পর, যখন দেখবে, তুমি খুব ভালোভাবে 'রিল্যাক্সড়' বা শিথিল হতে পারছো, তখন 'মহা-যোগনিদ্রা' অভ্যাস করতে শুরু করবে। এই সময় কেউ যাতে কিছুমাত্র বিরক্ত বা স্পর্শ না করে, তারজন্য পূর্বেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মনেরেখ, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এখন, যারা বেশ কিছুদিন অভ্যাস করেও বিশেষ 'রিল্যাক্সড় হতে পারছো না, বুঝতে হবে। কোনো না কোনো বিশেষ অসুখে ভুগছো, অথবা জন্মগত কোন স্নায়বিক ত্রুটি আছে। সেক্ষেত্রে, এই অসুবিধা কাটানোর জন্য হোমিওপ্যাথিক বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করে দেখতে পারো। এছাড়া, ‘হঠযোগ' এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক চিকিৎসার সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে। এখানে আমি কয়েকটি প্রাথমিক ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করছি— ১) ভরপেট ভাত খেলে শরীর আপনা থেকেই কিছুটা শিথিল হয়ে যায়। এই সময় 'শবাসন' অভ্যাস করে দেখতে পারো। ২) সকাল-বিকাল দু-বেলা আসন ও ব্যায়াম অভ্যাস করা প্রয়োজন৷ ব্যায়ামের পরে শবাসন অভ্যাস করা যেতে পারে। ৩) যাদের ভালো ঘুম হয় না, তারা হোমিওপ্যাথির সাহায্য নিতে পারো। এছাড়া, সুশুনি শাক, জটামাংসী ভেজানো দু-চামচ জল, ‘প্যাসিফ্লোরা -মাদারটিঞ্চার', 'রাউলফিয়া সাপেন্টিনা -মাদারটিঙ্কার', -এগুলি চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবহার করে দেখতে পারো। তবে এলোপ্যাথিক ‘সিডেটিভ’ বা ‘ট্রাঙ্কুইলাইজার' বা ঘুমের ওষুধ অথবা কোনো ‘ড্রাগ’ নিয়ে শবাসন অভ্যাস করবে না। বিশেষ কোনো স্নায়বিক বা মানসিক অসুস্থতা থাকলে চিকিৎসকের অনুমতি পরামর্শ এবং বিশেষজ্ঞ মনস্তত্ববিদ-এর উপস্থিতি ও তত্ত্বাবধানে মহা-শবাসন ও মহা-যোগনিদ্রা অভ্যাস করা কর্তব্য।

সবশেষে আরও কিছু জরুরী কথা, -এই অডিও সিডি-গুলির অপব্যবহার যেন কোনোমতেই না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখবে। আত্মবিকাশ--- ধ্যান, যোগ প্রভৃতি সাধনার বিষয়। অকারণে- অসময়ে পূর্বনির্দেশিত ব্যবস্থা ছাড়া, এই সিডি চালানো নিষেধ। এতে নিজেরই ক্ষতি হবে। মন খুব সূক্ষ্ম জিনিস, তা মোটেই অবহেলার বিষয় নয়। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনের কাছে, হাল্কা পরিবেশে নিজেকে জাহির করার জন্য অথবা নিছক কারো কৌতুহল নিবৃত্তির জন্য এর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশেষ প্রয়োজনে, উপযুক্ত ব্যক্তিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করার মতো মানসিক প্রস্তুতি ও শিক্ষা আছে যার, তেমন ব্যক্তিকেই পূর্বে এই নির্দেশিকা পাঠ করতে দিয়ে তারপর পূর্ব-নির্দেশিত পরিবেশে তাকে শোনানো যেতে পারে।

সাধারণভাবে, পূর্ব-নির্দেশিত ব্যবস্থা ছাড়াই এই সিডির ব্যঞ্জনাপূর্ণ ব্যবহারিক কার্যকর সাজেশন গুলি শুনলে, কোনো ফল লাভ হবে না, কোনো ক্রিয়াই অনুভূত হবে না। সিডির প্র্যাকটিকাল অংশ শোনা এবং কাউকে শোনানোর পূর্বে এই প্রবন্ধ পাঠ করা অত্যাবশ্যক, তবে কাউকে বিস্তারিতভাবে এ সম্পর্কে জানিয়ে তারপরে তাকে শোনানো যেতে পারে।

এই ‘সিডি' 'কপি' করে অপরকে দেওয়া শুধুমাত্র আইনত: অপরাধই নয়, এর ফলে আধ্যাত্মিক বা মানসিক দিক থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্ভব। উপকার পেলে প্রচার করতে আপত্তি নেই। আগ্রহীগণকে সরাসরি 'মহা-আত্মবিকাশ কেন্দ্র'-এর সাথে যোগাযোগ করতে বলবে। আমাদের ওয়েবসাইটেও আসতে পারো। প্রচারের সময় কখনোই ফেনিয়ে-ফাপিয়ে কিছু বলবে না। যা সত্য তা-ই বলবে। মহাআত্মবিকাশ কার্যক্রমে যে সমস্ত যোগ-প্রক্রিয়ার কথা এখানে বলা হয়েছে, প্রাচীন যােগশাস্ত্রে উল্লেখিত দুরূহ বিধি-নিয়ম-পদ্ধতির সাথে এর অনেকাংশেই মিল নেই। 'মহামানস মন্ডলের' যোগসাধনা- প্রচলিত যোগ-প্রক্রিয়া থেকে অনেকটা স্বতন্ত্র।

আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধ'রে, অনেক গবেষনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপযোগী করে, সহজ-সরলভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে- এই 'মহা-আত্মবিকাশ-যোগ কার্যক্রম'।

আত্মবিকাশ- আত্মজ্ঞান, আত্মচেতনার বিকাশ, আত্মশক্তির বিকাশ। -যার দ্বারা আত্মিক এবং জাগতিক বিষয়-বস্তু ও ঘটনাগুলিকে আরও ভালোভাবে আরও বেশী করে অনুভব ও উপলব্ধি করা যায় এবং তাদের মধ্যেকার তথ্য ও তত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান জন্মায়। -যার মধ্য দিয়ে জাগতিক বিষয়-বস্তু - ঘটনাগুলির উপর এবং নিজের উপর ক্রমশ নিয়ন্ত্রণলাভে সক্ষম হয়ে ওঠে মানুষ। নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, নিজেকে জানা, নিজের অতীতকে জানা, ভবিষ্যত লক্ষ্যকে জানার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছন্দ গতিতে এগিয়ে চলতে সক্ষম হয় সে তখন। জগৎকে আরও বেশী আরও ভালভাবে ভোগ করতে সক্ষম হয়ে ওঠে সে, একজন প্রকৃত সফল ও সৌভাগ্যবান মানুষ হয়ে উঠতে পারে সে মহা-আত্মবিকাশ-যোগ-এর মধ্য দিয়ে।

 
 
 

Recent Posts

See All
নিজের মনকে জানো

‘মন’-এর কথা (মহর্ষি মহামানস-এর অধ্যাত্ম-মনোবিজ্ঞান হতে গৃহীত) একটি শিশুকে আগ্রহের সাথে বারবার নানাবিধ প্রশ্ন করতে দেখে, আমরা সাধারণতঃ...

 
 
 

1 Comment


Ramesh Saha কাল ও কালীর নন্দন
Ramesh Saha কাল ও কালীর নন্দন
May 10, 2021

আপনারা যেটা বলছেন মহাশবাসন সেটাকে " যোগনিদ্রা "বলা হয়।

Like

JOIN US

  • Facebook B&W

© 2019  by MahaManan. Proudly created with Wix.com

bottom of page