top of page
Search
  • Writer's pictureমহর্ষি মহামানস

প্রসঙ্গ: ধ্যান



।। প্রসঙ্গ: ধ্যান ।।

~মহর্ষি মহামানস


ধানের প্রসঙ্গ এলেই, সজাগ-সচেতন নতুন শিক্ষার্থীদের মনে যে প্রশ্ন দুটি প্রথমেই আসে, তা হলো~ ধ্যান আসলে কি এবং ধ্যান কেন করবো।


কোন কিছুতে, অথবা কোনোকিছু চিন্তন, কল্পনা, স্মরণ অথবা মনশ্চক্ষে অবলোকীত বিষয়ে একনিবিষ্ট হয়ে পুনঃপুনঃ সেই বিষয়-বস্তুর চিন্তার দ্বারা অবিরাম বা সবিরামভাবে মনোযুক্ত থাকাকেই সাধারণভাবে বলা হয়, ধ‍্যান বা ধ‍্যান করা।


'যোগ' প্রসঙ্গে যেমন বলেছি, ধ‍্যানের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। ধ‍্যানের মূল উদ্দেশ্য হলো, ধ‍্যেয় বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিলিত হয়ে--- তার অন্তর্নিহিত সত্যকে জানা। এই সম‍্য‍্যক জ্ঞান লাভের ফলে, ধ‍্যানীর চিন্তাভাবনা ধারণায় অনেক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এবং অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্ত হয়ে সে তখন জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এছাড়াও সঠিকভাবে সাফল্যমন্ডিত ধ‍্যানের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই ধ‍্যেয় বিষয়বস্তুর উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করাও সম্ভব হয় কখনো কখনো। ধ‍্যানী ও ধ‍্যেয় বিষয়বস্তুর মূল উপাদান আসলে একই। তাই, সুগভীর ধ‍্যানের মধ্য দিয়ে যদি কখনো ধ‍্যানী এবং ধ‍্যেয় বিষয়বস্তু মিলিত হয়ে, অবশেষে একাত্মতা লাভ করে একাকার হয়ে যায়, তখনই ঘটে প্রকৃত সমাধি অবস্থা। তবে ভাবসমাধি আর প্রকৃত সমাধি এক জিনিস নয়। অন্ধবিশ্বাস ভিত্তিক অলীক বিষয়বস্তুর ধ‍্যানের ক্ষেত্রে এইরূপ ঘটে না। এই বিষয়ে 'মহামনন' আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষার ক্লাসে বিশদভাবে আলোচনা হবে।

ধ‍্যানের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি বিভিন্ন প্রকারের। যেমন সজাগ-সচেতন ধ‍্যান, ভাবাবেশ মুলক ধ্যান, শূণ্য ধ‍্যান, অলীক ধ্যান, আত্ম-ধ‍্যান।

এখানে উল্লেখিত 'মহামনন' ধ‍্যান পদ্ধতিটি হল আত্ম-ধ‍্যান বা অধ‍্যাত্ম ধ‍্যানের একটি বিশেষ পদ্ধতি। আত্ম-ধ‍্যান হলো--- যুক্তিবাদী বিজ্ঞান-মনষ্ক, প্রকৃত অধ‍্যাত্ম সচেতন, মুক্ত মনের, আত্মবিকাশ অর্থাৎ মনোবিকাশকামী সজাগ-সচেতন মানুষের উপযোগী আত্মবিকাশমূলক ধ‍্যান।


'মহামনন' আত্ম-ধ‍্যান-যোগের ক্ষেত্রে ধ‍্যানের বিষয় হলো নিজের মন। যাকে জানলে, সব জানা হয়, যার বিকাশ ঘটানোই আমাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ। আবার, সেই বিষয়ানুরাগী ধ‍্যানী যে, সে-ও তো সেই মন। একে বলা হয়--- আত্ম-ধ‍্যান বা অধ‍্যাত্ম ধ‍্যান। নিজেকে জানা--- উপলব্ধি করা, নিজের (মনের) এবং অন্তর্নিহিত শক্তি--ক্ষমতার বিকাশ ঘটানোই এই ধ‍্যানের লক্ষ্য।


এই ধ‍্যানের জন্য সজাগ-- সচেতনতাসহ তীব্র চাহিদা--- অনুরাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি, ইতিপূর্বে প্রকাশিত তথ্য ও তত্ত্ব (মহাবাদ) সম্পর্কে অধ‍্যয়ন করতে হবে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে। এই জ্ঞান লাভও 'মহামনন' শিক্ষা বা সাধনার একটা অঙ্গ। এই ধ‍্যানে সাফল্য লাভ করতে, মনকে অন্তর্মুখী স্থির একাগ্র করে তোলার জন্য বিশেষ কয়েকটি যোগ-পদ্ধতি পূর্বেই অনুশীলন করতে হয়। তাতেই অর্ধেক কাজ হয়ে যায় এবং অর্ধেক পথ অতিক্রম করা হয়ে যায়। গভীর ধ‍্যানের মধ্যে ডুবে গিয়ে অন্তর-মন সাগরের রত্নখনি থেকে দিব‍্য-রত্ন তুলে আনা সহজসাধ‍্য হয় এর দ্বারা।


নতুন শিক্ষার্থীদের বোঝার সুবিধার জন্য আর একবার বলি, সাধারণভাবে 'ধ‍্যান' হলো--- কোনো কিছুতে মনোযুক্ত হওয়া বা মনোযোগ দেওয়া। যাকে বলা হয় ধ‍্যান দেওয়া। অথবা গভীর ভাবে কোনও কিছুর চিন্তা করা।

কিন্তু ধ্যান বা ধ্যান-যোগ কথাটি যখন বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন 'ধ্যান' বা 'ধ্যান করা' কথাটি বিশেষ অর্থ বহন করে থাকে। তখন, 'ধ্যান' অর্থে অত্যন্ত অনুরাগের সঙ্গে তন্ময় হয়ে, অথবা ভাবাবেশে আচ্ছন্ন হয়ে--- স্থির একনিবিষ্ট হয়ে, কোনো বিষয়-বস্তু বা ভাবনা বা স্মৃতি বা কল্পনা প্রভৃতি কোন একটি বিষয়ে চিন্তামগ্ন হওয়া অথবা মগ্নচিত্ত হওয়া অথবা মনোনিবেশ করা বোঝায়।


তবে ধানের প্রকারভেদ আছে। তারমধ্যে, একপ্রকার ধ‍্যান আছে, যাতে কোন কিছুতে মনোসংযোগ করা অথবা একাগ্র হয়ে কোনোকিছু চিন্তা করার কোনো স্থান নেই। তাকে চিন্তাশূণ্য বা শূণ্য ভাবের ধান বলা হয়। তবে পূর্বোক্ত একাগ্র মনোসংযোগ মূলক ধ‍্যানের ক্ষেত্রেও, শেষ পর্যায়ে চিন্তাশূন্য এক বিহ্বল ভাবাবেশ সৃষ্টি হয়ে থাকে। শূণ‍্যাবস্থা সৃষ্টি হয়ে থাকে।


আরেক প্রকার ধ‍্যান আছে, সেক্ষেত্রে ধ‍্যানী তীব্র আবেগ বা ভাবাবেগ দ্বারা চালিত হয়ে, খুব দ্রুত গতিতে অত্যন্ত গভীর ধ্যান-স্তরে উপস্থিত হয়ে থাকে। অবশ্য এই প্রকার ধ্যান সবার ক্ষেত্রে ঘটে না। আমাদের আলোচ্য ধ্যান প্রকারটি হলো--- আত্ম-ধ্যান। এখানে ধ‍্যানীর ধ‍্যানের বিষয় সে নিজেই। অর্থাৎ ধ্যানী-ও 'মন', আবার ধ‍্যানের বিষয় বা ধ‍্যেয় বিষয়-ও সেই 'মন'।


এই প্রসঙ্গে বলি, শুধু ধ‍্যান-যোগ দিয়েই সমস্ত শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন কথা আমি বলি না। শরীরের মধ্যে প্রচুর পরিমানে অর্জিত ও বংশগত টক্সিন বা রোগবিষ থাকলে, তা' ধ‍্যান-যোগ অভ‍্যাসে বিঘ্ন ঘটাবে। সেক্ষেত্রে মোটামুটি সাধারণ স্তরের ধ‍্যান হলেও, তাতে পুরোপুরি সমস্যা মিটবে না। তাই, ধ‍্যান-যোগ অভ‍্যাসের পাশাপাশি, শরীর থেকে টক্সিন মুক্ত করতে হবে নিয়মিতভাবে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আহার-বিহার করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, রোগ অবদমনকর চিকিৎসা, দুষিত পরিবেশে বাস এবং অনিয়মিত জীবনযাপন মনকে অস্থির, উত্তেজিত ও অসুস্থ করে তোলে। যা ধ‍্যান-যোগ সাধনা এবং তাতে সাফল্য লাভের পক্ষে মোটেও অনুকূল নয়।

139 views0 comments
bottom of page