top of page

আধ্যাত্মিকতা

  • Writer: মহর্ষি মহামানস
    মহর্ষি মহামানস
  • Jul 4, 2019
  • 3 min read

আধ্যাত্মিকতা ~মহর্ষি মহামানস



'অধ্যাত্ম' কথাটির অর্থ হলো--- আত্ম বা মন বিষয়ক। 'আত্মা আর 'মন' সমার্থক। সে মানব শরীর সম্পন্ন-ই হোক অথবা অশরীরী মন-ই হোক, মানবমন অথবা আরও উচ্চচেতন মন, অথবা ঈশ্বর মন, যা-ই হোক না কেন, একটি সচেতনতা সত্তা, যে অনুভব করতে সক্ষম চিন্তা করতে সক্ষম, সে-ই হলো মন।


অনেকেই প্রচলিত ধর্মাচারণকেই 'আধ‍্যাত্মিকতা' বলে, মনে করে থাকেন। কিন্তু তা' প্রকৃত আধ‍্যাত্মিকতা নয়। অন্ধবিশ্বাস--- অন্ধ-অনুসরণ থেকে মুক্ত হয়ে, সজাগ-সচেতনভাবে খোলা মনে যুক্তিপথ ধরে আত্ম-জ্ঞান-- আত্ম-উপলব্ধি-- আত্মবিকাশ লাভের জন্য অগ্রসর হওয়াই প্রকৃত আধ‍্যাত্মিকতা।


আমরা মূলত আধ্যাত্বিক অস্তিত্ব। বিশ্বাত্মা বা ঈশ্বর মন থেকে সৃষ্টি হওয়া, বিশ্বাত্মার মানস সন্তান স্বরূপ--- ভার্চুয়াল অস্তিত্ব। মন থেকেই উৎপত্তি এবং প্রধানত মন সম্পন্ন অস্তিত্ব। আমাদের সমস্ত (মানসিক) কার্যকলাপই আধ্যাত্মিকতা। আমাদের সমস্ত কাজকর্মের পিছনেও রয়েছে আধ্যাত্মিকতা।


প্রকৃতপক্ষে, আমাদের মানসিকতা আর আধ্যাত্মিকতা প্রায় সমার্থক। কিন্তু ব্যবহারিক দিক থেকে, মানসিকতা বা মানসিক সক্রিয়তা থেকে আধ্যাত্মিকতা কথাটি অনেক বেশি অর্থবহ। আধ‍্যাত্মিকতা--- প্রধানত আত্মজিজ্ঞাসা, আত্ম-অন্বেষণ, আত্ম-উপলব্ধি, আত্মবিকাশ এই সমস্ত মানসিক সক্রিয়তার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত।


আমরা যা কিছুই করিনা কেন, যা-ই ভাবিনা কেন, সবকিছুর পেছনেই--- আমাদের জ্ঞাতে অথবা অজ্ঞাতসারে কাজ করছে--- সেই আদি প্রশ্ন--- আদি উদ্দেশ্য। 'এটা চাই' --- 'ওটা চাই' বলে, কতো কিছুর পিছনেই না ছুটে মরছি আমরা। কিন্তু কিছুতেই তৃপ্ত--- সন্তুষ্ট হতে পারছি না। প্রকৃতপক্ষে, আমরা যা চাই--- সেই অমূল্য রতন--- 'আত্মজ্ঞান' যতক্ষণ পর্যন্ত না লাভ করছি, ততক্ষণ এই চাওয়া আর ছোটার পালা চলতেই থাকবে।


আত্মজিজ্ঞাসা--- আত্ম-অন্বেষণ হলো আধ্যাত্মিকতার প্রথম কথা। আমি কে--- আমি কেন--- আমি কোথা হতে এসেছি, এবং কোথায় আমার গন্তব্য, এই মহাবিশ্ব-সৃষ্টির শুরু কোথায় এবং এর অন্তিম লক্ষ্য-ই বা কী---? এই নিয়েই আধ্যাত্মিকত জগত।

প্রকৃত আধ‍্যাত্মিকতা আর প্রচলিত বা তথাকথিত আধ্যাত্মিকতা এক জিনিস নয়। 'কে আমি---?' এই হলো প্রকৃত অধ্যাত্ম জগতে প্রবেশের প্রথম পদক্ষেপ। এবং তার অন্তিম লক্ষ্য হলো--- 'একত্ব'। চেতনার ক্রমবিকাশের পথ ধরে এগিয়ে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই ক্রমশ অশরীরী আত্মা, উচ্চ থেকে উচ্চতর চেতন স্তরের সত্তা বা আত্মা, দেব-চেতন আত্মা, ---ক্রমে বিশ্বাত্মা বা ঈশ্বরাত্মার সাক্ষাৎ ঘটবে এই পথে। বিকাশিত হতে থাকবে একে একে ক্রমোচ্চ চেতন-স্তরের মনগুলি।


যদিও মন বা আত্মা-ই অধ্যাত্ম জগতের প্রধান কেন্দ্র, তবুও মনের মধ্যে--- আমিত্ববোধকারী যে সত্তা বা অংশটি রয়েছে, সেই 'আমি' বা 'অহম' আকারধারী অংশটিই হলো আধ্যাত্মিকতার মুল কর্তা। আত্মসচেতন তথা 'আমি সম্পর্কে সজাগ-সচেতন সেই অংশটি, যে চিন্তা করে--- অনুভব করে, এবং ইচ্ছা প্রকাশ করে।

এ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে 'মন' ও 'চেতনা' সম্পর্কিত অন্যান্য প্রবন্ধ গুলি পড়তে হবে।

নিজের স্বরূপ--- নিজের প্রকৃত রূপ বা অস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছাই হলো আধ্যাত্মিকতা। ক্রমশ ব্যক্তি 'আমি' থেকে মহা 'আমি', অতঃপর আদি 'আমি' সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান লাভের মধ্য দিয়ে আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে ঐকান্তিকভাবে উদ্যোগী হয়ে ওঠাই হলো প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা।


মনে রাখতে হবে, বর্তমানে আমাদের সক্রিয় মন (সচেতন ও অবচেতন মন) দুটি-ই সমগ্র মন নয়। সমগ্র মনটি হলো অনেকটা পদ্মফুলের মতো। সেখানে রয়েছে অনেকগুলি অংশ এবং অনেকগুলি মনোবিকাশের ধাপ বা পর্যায়।

মন হলো অনেকাংশে বিকাশমান পদ্মের মতো। অনেকগুলি মনোস্তর সম্বলিত এই মনোপদ্ম--- বিকাশের বিভিন্ন ধাপ বা পর্যায়ের মধ্য দিয়ে, একের পর এক, ধাপে ধাপে (মনো) বিকাশ ঘটে থাকে তার।


অস্ফূট চেতন-স্তরের মন থেকে, ক্রমশ কীট-চেতন-মন, তারপর সরিসৃপ-চেতন-মন বিকশিত হয় ক্রমে ক্রমে। মনোরূপ পদ্মের বিকাশমান পাঁপড়িগুলির পরবর্তী বিকাশ পর্যায় হলো--- পশু-চেতন- মনোস্তর। তারপরে বিকশিত হয়--- প্রাক মানব-চেতন- মন, এবং তৎপরবর্তী পর্যায়ে বর্তমান মানব-চেতন বা সচেতন মনের বিকাশ ঘটে। ক্রমশ অতিচেতন বা মহামানব-চেতন, ক্রমে দেব-চেতন, মহাদেব-চেতন প্রভৃতি স্তর গুলির বিকাশ ঘটতে থাকে একের পর এক। বোঝার সুবিধার জন্য পূর্বোক্ত কয়েকটি নামে বিভিন্ন চেতনস্তরের মনের উল্লেখ করা হলেও, এর মধ্যেও রয়েছে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বহু মনোস্তর। আরো বিশদভাবে জানতে 'মহাবাদ' গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।


শেষ পর্যায়টি হলো ঈশ্বর-চেতন মনোস্তর--- বিশ্বাত্মা বা ঈশ্বর মন। যদিও অন্তিমে আরও একটি পর্যায় আছে। যখন মনো-পদ্মের সমস্ত পাঁঁপড়িগুলি ঝরে গিয়ে--- থাকে শুধু বীজ সমন্বিত অবশিষ্ট অংশটি (পুনরায় সৃষ্টির জন্য) ---সেই হল আদি-চেতন-মন (সংস্কৃত ভাষায় যাকে বলা হয় ব্রহ্ম) বা পরমাত্মা।


যে এই বহির্জগৎ সহ তার মন ও তার অন্তর্জগৎ সম্পর্কে সচেতন---অবগত, এবং সেই সাথে বিশ্বাত্মা--- মহা বিশ্বমন সম্পর্কেও সচেতন, সেই হল যথেষ্ট অধ্যাত্ম সচেতন মানুষ।


প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা বিশ্বাস নির্ভর নয়। প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা অলৌকিকতার পিছনে ছোটা নয়। অনেক মানুষই মনে করে, ঈশ্বরের পূজা--- উপাসনা--- প্রার্থনা এবং যাবতীয় ধর্মীয় কার্যকলাপই হলো আধ্যাত্মিকতা। অনেকে মনে করে, অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা--- অলৌকিক শক্তির অধিকারী হওয়ার জন্য সুলুক-সন্ধান জানা এবং সেই পথে সাধন করাই হলো আধ্যাত্মিকতা।


মানব-চেতন বা সচেতন মনের কোন অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা নেই, আছে যুক্তি-বিচার-বিশ্লেষণ বিজ্ঞানমনস্কতা। অবচেতন মনের কিছু বিশেষ ক্ষমতা থাকলেও তা' অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা নয়। ক্রমোচ্চ অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী হলো--- সচেতন মন বা মানব-চেতন মনের পরবর্তী উচ্চ চেতন স্তরের মন গুলি। যারা মানব চেতনা মনের যথেষ্ট বিকাশের পর থেকে, একে একে ক্রমশ বিকাশ লাভ করতে থাকে। কারো মধ্যে পরবর্তী উচ্চ চেতন মনের কিঞ্চিৎ বিকাশ বা স্ফূরণ ঘটতে দেখা গেলে, বুঝতে হবে তা ব্যতিক্রমী ঘটনা। এ' হলো, পরবর্তী সময়ে বিকাশযোগ‍্য মনটি তার অস্তিত্বের সংকেত পাঠাচ্ছে। এখন, আগের কাজ আগে করতে হবে। মানব মনের বিকাশ না ঘটিয়ে, পরবর্তী উচ্চ চেতন মনের বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়।


বস্তুত, প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা আর প্রচলিত--- তথাকথিত আধ্যাত্মিকতা অনেকাংশেই ভিন্ন। এবং প্রচলিত আধ‍্যাত্মিকতার পথে চলা, আসলে ভুল পথে চলা। এই কারণেই, প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক মানব বিকাশমূলক মৌলিক ধর্মের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। যে ধর্ম মানুষকে শিশু-চেতন স্তরে আবদ্ধ না রেখে, মিথ্যার পিছনে না ছুটিয়ে, সরাসরি মানব মনের চেতনার বিকাশে সহায়ক হবে, এবং মানুষের কাছে প্রকৃত সত্যকে উন্মোচিত করে--- সেই সত্যে পৌঁছানোর পথ প্রদর্শন করবে। আমাদের সেই চিরন্তন আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করে তুলতে, সময়ের প্রয়োজনে---'মহাধর্ম' মানব ধর্মের সূচনা হয়েছে আজ। জয়, মানব ধর্ম--- মহাধর্ম-এর জয়।

 
 
 

Recent Posts

See All
নিজের মনকে জানো

‘মন’-এর কথা (মহর্ষি মহামানস-এর অধ্যাত্ম-মনোবিজ্ঞান হতে গৃহীত) একটি শিশুকে আগ্রহের সাথে বারবার নানাবিধ প্রশ্ন করতে দেখে, আমরা সাধারণতঃ...

 
 
 

Comments


JOIN US

  • Facebook B&W

© 2019  by MahaManan. Proudly created with Wix.com

bottom of page