top of page
Search
  • Writer's pictureমহর্ষি মহামানস

প্রাকৃতিক উপায়ে রোগবিষ বহিস্করণ পদ্ধতি

Updated: Aug 7, 2019




ধ্যানের মাধ্যমে সুস্থতা লাভ হলেও, ধ্যানের জন্যেও প্রয়োজনীয় সুস্থতা থাকতে হবে।

অসুস্থতার অন্যতম কারণ হলো রোগবিষ বা টক্সিন। আমরা নানা প্রকারের ওষুধ খেয়ে সাময়ীকভাবে সুস্থতা লাভ করলেও, শরীরে টক্সিনের মাত্রা ক্রমশই বাড়িয়ে চলেছি। অধিকাংশ ওষুধেরই কিছু না কিছু কুফল বা সাইড এফেক্ট বা এডভার্স এফেক্ট রয়েছে। আসল রোগের সঙ্গে ওষুধের কুফল যুক্ত হয়ে, ক্রমশই আমাদের রোগ-ব্যাধি আরও জটিল আকার ধারণ করে চলেছে।


প্রতিনিয়ত জল-বাতাস-খাদ্য প্রভৃতি ক্রমশই সাঙ্ঘাতিকভাবে দুষিত ও বিষাক্ত হয়ে চলেছে। আমাদের শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে চলেছে প্রতিদিনই। তাই, প্রাকৃতিক উপায়ে যথাসম্ভব সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। ওষুধের উপর নির্ভর না করে, নিয়মিতভাবে শরীর থেকে রোগবিষ দূরীকরণের মাধ্যমে আমরা সুস্থ থাকার চেষ্টা করবো।


আমাদের শরীর তার আভ্যন্তরীণ মলিনতাকে দূর করতে, সে তার নিজস্ব ব্যবস্থা মতো বিভিন্ন রন্ধ্রপথে বিভিন্ন প্রকার স্রাব নির্গমনের মধ্য দিয়ে, নানাবিধ রােগবিষ –বর্জনীয় পদার্থ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু রোগবিষ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায়, সবসময় সে এই কাজে সফল হতে পারে না, ফলে ক্রমশ শরীরে রোগবিষ পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে। আমাদের অসুস্থতার অন্যতম কারণই হলো – এই রোগবিষ, রোগ সৃষ্টি করে যে বিষ।


শরীরের পক্ষে অনিষ্টকর– বিরূপ এই সমস্ত বর্জ্য পদার্থকে আমরা যদি বাইরের সাহায্য নিয়ে বহিস্কার করতে সক্ষম হই, তাহলেই আমরা অনেকাংশে সুস্থতা লাভ করতে পারবো। অবশিষ্ট অসুস্থতার জন্য আমাদেরকে মনোপথে (ধ্যান) অগ্রসর হতে হবে৷


রোগবিষ ও রোগলক্ষণকে চাপা দিয়ে আপাত সুস্থতা লাভের চেষ্টার ফলে, আমরা আরো কঠিণ ও জটিল ভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ি। তাই, ও পথে না গিয়ে রোগবিষকে শরীরের বাইরে বার করে দেওয়ার অথবা তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। যদিও এই কাজটি মোটেই সহজ কাজ নয়। তবুও, নিজেদের স্বার্থে, সুস্থভাবে বাঁচার স্বার্থেই এটা করতে হবে আমাদের।


শরীর থেকে রোগবিষ নিষ্ক্রান্ত হয়ে থাকে সাধারণতঃ নাসাস্রাব, অশ্রুস্রাব, কর্ণমল, লালাস্রাব, প্রস্রাব, ঘাম ও মল ত্যাগের মধ্য দিয়ে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার চর্মরােগ এবং তাদের স্রাবের মধ্য দিয়েও রোগবিষ বহিস্কৃত হয়ে থাকে।

আমাদের জীবন দায়ক খাদ্য, পানীয়জল, বাতাস সহ সমস্ত পরিবেশ ক্রমশই অত্যন্ত দুষিত বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমানে বিষাক্ত পদার্থ বা রােগবিষ জমা হয়ে চলেছে। এখন মানুষ আর বয়সে বুড়ো হয়না, অকালে রোগেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। মানব জগতে অস্বাভাবিক যা কিছু ঘটছে তার অনেকাংশের মুলেই আছে এই বিষাক্ততা।

এখন, পৃথিবীকে বিষমুক্ত করা – প্রায় দুঃসাধ্য কাজ৷ তবু আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। নানা উপায় অনুসন্ধান করতে হবে। সেই সাথে, আমাদের ভিতরে জমে থাকা বিষ বা রোগবিষ থেকেও যথাসাধ্য মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সুস্থজীবন উপভোগ করতে হলে, নিয়মিত ভাবে শরীর-মনকে বিষমুক্ত করার কাজে লেগে থাকতে হবে। আমাদের এই ডিটক্সিফিলেশন পদ্ধতি- শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকা বিভিন্ন ধরণের পরজীবি কীট, কীটাণু, জীবানু ও ফাঙ্গাসদেরও দূর করে থাকে।


এবার, আমি এক এক করে রোগবিষ দূরীকরণের পদ্ধতিগুলি বর্ণনা করবো।


১৷ শুরুতে, কোনো এক ছুটির দিনের পুর্বের রাত্রে বিশেষ অনিষ্টকর নয় এমন কোনো প্রাকৃতিক জোলাপ গ্রহন করে শুয়ে পড়তে হবে। খাদ্য গ্রহনের ২ঘন্টা পরে জোলাপ সেবন কর্তব্য। চিকিৎসকের নির্দেশ মতো হার্বাল, আয়ুর্বেদিক অথবা। হােমিওপ্যাথিক জোলাপ সেবন করতে হবে। পুরাতন অম্ল -অজীর্ন আমাশার রােগী- যাদের অন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে ক্রিমি-জিয়ারডিয়া-ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তারা জোলাপ গ্রহনের দিন চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ক্রিমির ওষুধ সেবন করতে পারেন৷

তিন বারের বেশি পায়খানা হলে, জলে ভেজানো ভাত। কাঁচা পোস্ত বাটা দিয়ে খাবেন। আশাকরি পায়খানা বন্ধ হয়ে যাবে।


এখানে দুটি পদ্ধতি জানাচ্ছি। এই দুটি পদ্ধতির যেকোনো একটির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

(ক) রাত্রে শোওয়ার পূর্বে সোনাপাতা (দুই চামচ) এবং ত্রিফলা (দুই চামচ) একত্রে ভেজানো জল পান করতে হবে। বেলার দিকে (১২ টা নাগাদ) একটা কাচের গ্লাসে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পান করার পূর্বে ছেঁকে নেবেন।

(খ) সকাল বেলায়, স্বল্প গরমজলসহ একচামচ ক্যাস্টর অয়েল পান করতে হবে।

যে পদ্ধতিটি সুবিধাজনক মনেহবে, সেটাই ব্যবহার করবেন।


এই প্রক্রিয়াটি মাসে একবার করে করা উচিৎ। পরের দিন ২–৩ বার পায়খানা হবে। প্রয়োজনে ORS বা নুন-চিনির জল পান করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটির দ্বারা অন্ত্রে জমে থাকা পরজীবি ও রোগবিষ অনেকটাই দূরীভূত হবে। এর ঠিক পরেরদিন থেকে---


২। প্রতিদিন সকালে, (সম্ভব হলে, পায়খানা করার পর) ২ গ্লাস উষ্ণ (অল্প গরম) জল পান করার পরে, গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে যতটা সম্ভব জল বের করে দেবেন। তবে খুব জোর করে বমি করার চেষ্টা করবেন না। প্রথম ২–৩ দিন অল্প করে জল বার করে, অভ্যাস করুন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাকস্থলী থেকে প্রতিদিন কিছুটা করে রোগবিষ বাইরে বার হয়ে যাবে।


৩৷ পনেরদিন অন্তর –মাসে ২বার উপবাস থাকা কর্তব্য। প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতেও উপবাস করা যেতে পারে। অন্ততঃপক্ষে মাসে একদিন উপবাস করা অবশ্য কর্তব্য। এরদ্বারা শরীর থেকে বেশ কিছুটা রােগবিষ বহীস্কৃত হয়ে থাকে, এবং পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়। উপবাস কালীন নিজের নিজের প্রকৃতি ও সহ্য মতাে ফলের রস আর জল পান করতে হবে। ফলের রস সহ্য না হলে, তরল খাদ্য সাবু, বার্লি, দুধ প্রভৃতি অথবা শাক-সজী সেদ্ধ করে, তার জল বা ক্বাথ খাওয়া যেতে পারে।

৪৷ প্রতিদিন সকাল-সন্ধায় বা রাত্রে, প্রাণযোগ (প্রাণায়াম অথবা সহজ প্রাণায়াম। 'প্রাণযোগ' প্রবন্ধ পড়ুন। )--- অর্থাৎ ক্ষমতা অনুযায়ী কিছুক্ষণ ধরে গভীর নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস নিতে হবে। তবে ভর্তি পেটে নয়। এর দ্বারা রক্তে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন এসে মেশার ফলে, শরীর নিজেকে রােগবিষ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া, এর দ্বারা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।


৫। সপ্তাহে অন্ততঃ ২–৩ দিন মহা-শবাসন বা সুষুপ্তি যোগ (রিল্যাক্সেশন) বা নিদ্রাযোগ অভ্যাস করতে হবে। এর অডিও সিডি আমাদের কাছে পাওয়া যাবে। এছাড়াও, প্রতিদিন ধ্যান অভ্যাস করা কর্তব্য। এর দ্বারা মনােবিষ ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে মন ও স্নায়ুমন্ডল সুস্থ হয়ে উঠবে, এবং তার ফলে শরীরও সক্রিয়তা ও সুস্থতা লাভ করবে।


৬। দিনের মধ্যে এক থেকে দুইবার, বেশি পরিশ্রম অথবা ব্যায়ামের মাধ্যমে, শরীর থেকে অনেকটা পরিমানে ঘাম ঝরিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন সহ্য ক্ষমতা আনুযায়ী ব্যায়াম বা পরিশ্রম করা অবশ্য কর্তব্য। এর দ্বারা রক্তে প্রচুর অক্সিজেন এসে মিশবে এবং ঘামের মাধ্যমে অনেকটা রােগবিষ বহীৰ্গত হবে৷


৭। সাধ্যমতো যথেষ্ট পরিমানে জল পান করলে ভালো প্রস্রাব হবে। এতেও অনেকটা পরিমানে টক্সিন শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। তবে পিপাসা না থাকলে, জোর করে বেশি জল পান করা উচিৎ নয়। সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি, বায়োকেমিক বা কোনো প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমে পিপাসাহীনতা দূর করার চেষ্টা করুন।



যা যা পরিহার বা এভয়েড করতে হবে---

এলকোহল, কফি, তামাক, ফাস্টফুড, প্যাকিং ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, রিফাইন্ড- প্রসেসড ফুড, কৃত্রিম খাদ্য, বেশী চর্বি জাতীয় খাদ্য, বেশি চিনি ও মিষ্টি, ময়দা, বেশী লবন, বাসি-পচা খাদ্য প্রভৃতি৷ সেঁতসেতে গরম আবহাওয়া এবং দুষিত আবহাওয়া, দুষিত জল, দুষিত সংসর্গ, চর্মরোগ এবং যেকোনো রোগকে চাপা দেওয়া চিকিৎসা, বাইরের থেকে ঘরে ফিরে এসে হাত-পা না ধোওয়া এবং আহারের পূর্বে হাত না ধোওয়া।


বিঃদ্রঃ- স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজ নিজ প্রকৃতি (বাত । পিত্ত । কফ প্রভৃতি) অনুযায়ী উপযুক্ত এবং সুষম আহার – বিহার -আচরণ কর্তব্য। যদি কখনাে উদ্ভেদ (স্কিন ডিজিস) আকারে চামড়া দিয়ে টক্সিন বহির্গত হয়, বিচলিত হবেন না৷ কিছুদিন পরে ওগুলাে আপনা থেকেই চলে যাবো না গেলে, হােমিওপ্যাথির সাহায্যে চিকিৎসা করাতে হবে৷


কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে, সেটি তখনকার মতো বন্ধ করে, আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷ যাদের পেটে /অন্ত্রে জ্বালা-যন্ত্রনা ও ক্ষত আছে, তারা অম্ল বা এসিড জাতীয় দ্রব্য গ্রহনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবেন৷ এই ডিটক্সিফিকেশন পদ্ধতি যাদের জন্য নয়- গর্ভবতী ও স্তনদাত্রী মহিলা, শিশু, সাঙ্ঘাতিক বা মারাত্মক রােগে আক্রান্ত ব্যক্তি, অতি বৃদ্ধ এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের অত্যন্ত দুর্বল ব্যক্তিগণ।


শরীর-কোষের মধ্যে গভীর ভাবে অন্তর্গ্রথিত (বংশগত বা অর্জিত পুরাতণ) রোগবিষকে এই সমস্ত পদ্ধতিতে নির্মূল করা যাবেনা। তার জন্য হোমিওপ্যাথি-র সাহায্য নিতে হবে।

17 views0 comments
bottom of page